কেন অনেক বিখ্যাত রংপুরের শতরঞ্জি?
Not allow reviews
কেন অনেক বিখ্যাত রংপুরের শতরঞ্জি?
শতরঞ্জির বুনন হল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বুনন পদ্ধতি। এখনও শতরঞ্জি উৎপাদন করতে যন্ত্রের দরকার হয়না।
Descriptions
আমাদের প্রত্যেকের বাসায় শতরঞ্জি জিনিসটা আছে। শতরঞ্জি হল এক প্রকার মোটা কাপড়। যা ঘরের মেঝেতে, টেবিল ক্লথে, জায়নামাজ, পাপোশ তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়। রংপুর জেলায় তৈরি এই শতরঞ্জি অনেক বিখ্যাত। অনেক প্রাচীন আমল থেকেই শতরঞ্জি তৈরি করছে রংপুরের কৃষকরা। আমাদের আজকের বিষয় রংপুরের শতরঞ্জি।
শতরঞ্জি হল এক ধরনের কার্পেট। এটি অনেক আগে অভিজাত বাড়ির বৈঠকখানায় বা বাংলো বাড়িতে বা খাঞ্জাজিখানায় বসার আসন হিসেবে ব্যাবহার করা হত। এমনকি মুঘল আমলেও সম্রাট আকবরের দরবারে শতরঞ্জি ব্যাবহার করা হত এমন শোনা যায়। শতরঞ্জি শব্দটি ফার্সি শব্দ শতরঞ্জ থেকে এসেছে। শতরঞ্জ হল দাবা খেলার ছক। দাবা খেলার ছকের সাথে শতরঞ্জির নকশার মিল আছে। সেখান থেকে শতরঞ্জি নামটি হয়েছে।
শতরঞ্জির বুনন হল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বুনন পদ্ধতি। এখনও শতরঞ্জি উৎপাদন করতে যন্ত্রের দরকার হয়না। বাঁশ ও রশি ব্যাবহার করে মাটির উপর সুতা দিয়ে টানা তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিটি সুতা গননা করে হাত দিয়ে নকশা করা হয়। রংপুরের ঘাঘট নদীর তীরে নিসবেতগঞ্জ নামে একটি গ্রাম আছে। এর আগের নাম ছিল পীরপুর। এই গ্রামের মানুষ দুশ বছর আগে বাঁশ দিয়ে একটি তাঁত যন্ত্র তৈরি করে। এই যন্ত্র দিয়ে তারা মোটা সু তি কাপড় ও উল দিয়ে এক ধরনের পাটি জাতীয় বস্তু তৈরি করে। একে বলা হত মালুদা। শিল্পীরা গ্রামের সুন্দর দৃশ্য নিয়ে কারুকাজ করত। এই সুন্দর মালুদা রাজা-বাদশারাও পছন্দ করতেন। এবং এর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। ১৮৩০ সালে নিসবেত নামে একজন ব্রিটিশ কালেক্টর আসেন রংপুরে। তিনি এই মালুদার সৌন্দর্য দেখে অনেক অভিভূত হন। এবং তিনি এই শিল্পটির মান উন্নয়ন এবং এর প্রচার চালাতে সাহায্য করেন। তাঁর নাম অনুসারে শতরঞ্জি তৈরির এই গ্রামের নাম পীরপুর এর বদলে হয় নিসবেতগঞ্জ। এবং মালুদা নামটিও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে শতরঞ্জি হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম সরকারিভাবে নিসবেতগ্রামে শতরঞ্জি তৈরির প্রকল্প গ্রহন করেন। তিনি এতে বিসিকের সাহায্য নেন। ১৯৮৫ সালে ৪৫ জন শতরঞ্জি শ্রমিককে সরকারিভাবে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এরপর আর সরকারিভাবে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি এই শতরঞ্জি শিল্পের প্রতি। কিন্তু এই শিল্পের প্রতি গ্রামের মানুষের ভালবাসা ছিল। তাই তারা শত সমস্যাতেও বাবা দাদার এই ব্যবসা ছাড়েনি। পরে বেসরকারিভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। এবং তাদের সহযোগিতায় এই শতরঞ্জি পল্লী আবার প্রান ফিরে পায়।